মঙ্গলবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৪:২৫
শয়তান প্রত্যেক মানুষকে তার নিজস্ব পথে বিভ্রান্ত করে

হযরত আয়াতুল্লাহ জাওয়াদী আমুলী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন: নিষ্পাপ ইমামগণ (আলাইহিমুস সালাম) বলেছেন— নিয়তই হলো আমলের আত্মা, আর নিয়ত করা একটি কঠিন কাজ। কারণ অনেক মানুষই কাজটি করে, কিন্তু সবার পক্ষে সঠিক নিয়ত করা সম্ভব হয় না।

হাওজা সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, হযরত আয়াতুল্লাহ জাওয়াদী আমুলী তাঁর এক বক্তব্যে “নিয়তের মূল্য ও তার কঠিনতা” প্রসঙ্গে বলেন:

নিষ্পাপ ইমামগণ (আলাইহিমুস সালাম) বলেছেন:
“মুমিনের নিয়ত তার আমলের চেয়েও উত্তম”
এবং আরও বলেছেন:
“সর্বোত্তম আমল হলো সবচেয়ে কষ্টসাধ্য আমল।”

নিয়ত হলো আমলের আত্মা এবং এটি অত্যন্ত কঠিন একটি বিষয়। কারণ কাজের বাহ্যিক রূপ অনেকেই সম্পাদন করতে পারে, কিন্তু সবার পক্ষে বিশুদ্ধ ও সঠিক নিয়ত করা সম্ভব হয় না।

প্রথমত, কোনো অপছন্দনীয় বা নিকৃষ্ট কাজকে “আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে (قربةً إلی الله)” করা যায় না। সুতরাং সেই কাজটির মধ্যেই এমন যোগ্যতা থাকতে হবে, যা মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করতে পারে; অর্থাৎ কাজটির মধ্যে কার্যগত সৌন্দর্য (حُسن فعلی) থাকতে হবে।
দ্বিতীয়ত, কাজটি সম্পাদনকারীর মধ্যেও কর্তৃত্বগত সৌন্দর্য (حُسن فاعلی) থাকতে হবে।

এই অবস্থায় যদি কোনো আমল সব ধরনের অপবিত্রতা ও মিশ্র উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত থাকে, তবে তার নিয়ত নিজ আমলের চেয়েও উত্তম হয়। তবে এটি অত্যন্ত কঠিন। এ কারণেই নিয়তকে সর্বোত্তম আমল বলা হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি একটি বই লেখে, স্বাভাবিকভাবেই সে চায় বইয়ের প্রচ্ছদে তার নাম লেখা থাকুক। অথবা কেউ যদি একটি মসজিদ কিংবা দাতব্য প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে, তবে সে আগ্রহী হয় যেন তার নাম ফলকে লেখা হয় বা বিভিন্ন মহলে প্রচারিত হয়। আবার কেউ কেউ চায় তাদের নাম যেন একেবারেই উল্লেখ না করা হয়— যাতে অন্যরা বলে: “তিনি এতটাই উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছেছেন যে নিজের নাম পর্যন্ত উল্লেখ করতে দেননি।”
এটিও এক প্রকার নেতৃত্ব-লালসা বা আত্মপ্রদর্শন (রিয়া)।

অর্থাৎ, কখনো কখনো মানুষ রিয়া করে, কিন্তু নিজেই বুঝতে পারে না যে সে রিয়াকারী। এটি এক ধরনের সূক্ষ্ম ও গোপন রিয়া, যা সাধারণত খুব কমই লক্ষ্য করা হয়। আর শয়তান প্রত্যেক মানুষকে তার নিজস্ব দুর্বলতার পথ দিয়েই প্রতারিত করে।

আবার কেউ কেউ এই ভয়ে ভালো কাজই করে না যে, অন্যরা না বলে বসে— “অমুক ব্যক্তি রিয়া করছে।” বাস্তবে এখানে মানুষের কথাই ভালো কাজ ছেড়ে দেওয়ার প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়।

সূত্র: কিতাব: মারাহিল আখলাক দার কুরআন, পৃষ্ঠা ২৪৫

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha